ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মহিলাদের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ থেকে শুরু করে নানাবিধ প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। আর এই সমস্ত প্রকল্পগুলির তালিকায় সবার প্রথমে নাম রয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মহিলাদের প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এই প্রকল্পের অধীনে অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের মহিলাদের বেশ কতোগুলি যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। যদিও অনেক মহিলাই লক্ষ্মীর ভান্ডার সংক্রান্ত এই সমস্ত তথ্যগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানেন না। আর তাই আজ আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় নথি, আবেদনের পদ্ধতি সহ অন্যান্য তথ্যগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
কারা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন:-
১. লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে মহিলাদের বয়স ২৫ বছর থেকে শুরু করে ৬০ বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
২. যেসমস্ত মহিলারা অন্য যেকোনো প্রকল্পের অধীনে রাজ্য সরকারের তরফে অনুদান পেয়ে থাকেন তারা এই প্রকল্পের অধীনে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। তবে যেসমস্ত মহিলাদের নাম বিধবা ভাতার আওতায় রয়েছে তারা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং বিধবা ভাতা এই দুটি প্রকল্পের অধীনে একই সাথে আবেদন জানাতে পারবেন।
৩. এই প্রকল্পে আবেদনের ক্ষেত্রে উক্ত মহিলাকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৪. যেসকল মহিলারা বর্তমানে যেকোনো সরকারি ক্ষেত্রে কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকুরীরত এবং পেনশনের সুবিধা পেয়ে থাকেন তারা এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন না। যদিও ইতিপূর্বে বলা হয়েছিলো যে, যেসমস্ত মহিলাদের রেশন কার্ড কিংবা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই তারা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন না। তবে বর্তমানে রাজ্য সরকারের তরফে এক নিয়ম মারফত এও বলা হয়েছে যে, যেসমস্ত মহিলাদের রেশন কার্ড কিংবা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই তারাও লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অধীনে কিভাবে আবেদন জানাবেন:- লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে রাজ্যে বসবাসকারী মহিলাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে আয়োজিত দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। পরবর্তীতে ক্যাম্প চলাকালীন ওই ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে জমা দিলেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:- পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী অন্য যেকোনো প্রকল্পের মতই লক্ষ্মীর ভান্ডারের অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে রাজ্যবাসী মহিলাদের বেশ কতোগুলি নথি জমা করতে হয়। আর এই সমস্ত নথিগুলি হলো,
১. আবেদনকারীর আধার কার্ডের প্রতিলিপি।
২. জাতিগত শংসাপত্র।
৩. আবেদনকারীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রতিলিপি। (যাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)
৪. আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস।
৫. সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
এক্ষেত্রে আপনার জমা করা নথির উপর ভিত্তি করে আপনি কোন ক্যাটাগরি ভুক্ত তা নির্বাচন করা হবে এবং আপনার ক্যাটাগরি অনুসারে আপনাকে এই প্রকল্পের অধীনে অনুদান দেওয়া হবে। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী জেনারেল এবং ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত মহিলাদের এই প্রকল্পের অধীনে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে এবং SC ও ST তালিকাভুক্ত মহিলাদের এই প্রকল্পের অধীনে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, সমস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রেই নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নির্ভুল ডিটেইলস দেওয়া আবশ্যক। যেহেতু এই প্রকল্পের অধীনে থাকা সমস্ত মহিলার অনুদানের টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে, তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যে কোনোরকম ভুল থাকলে উক্ত মহিলাকে এই প্রকল্পে অনুদান পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য করা হবে না। যদিও শুধুমাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস নয়, অন্য যেকোনো নথির ক্ষেত্রেই এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। সমস্ত তথ্য সঠিক থাকলে তবেই মহিলারা এই প্রকল্পের অধীনে অনুদান পাবেন।