আগামীকাল সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja)। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত স্কুল, কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলার মানুষের বাড়িতে সরস্বতী পুজো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আর পূজা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সরস্বতী পুজো নিয়েও তেমনভাবেই বেশ কতোগুলি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। নানা শাস্ত্রে মা সরস্বতীর নানাবিধ প্রিয় বস্তুর উল্লেখ করা হয়েছে, আর তার মধ্যে অন্যতম হলো পলাশ ফুল, সাদা ও হলুদ রং, আমের মঞ্জুরি এবং ভোগ।
তবে দেবী সরস্বতীর প্রিয় বস্তুগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় দেবী সরস্বতীর ভোগ নিয়ে। মা সরস্বতীর ভোগ সম্পর্কে ও নানা শাস্ত্রে নানাবিধ বস্তুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে, সরস্বতী পূজার দিন দেবী সরস্বতী প্রিয় নৈবদ্য অর্পণ করতে পারলে যেকোনো ব্যক্তি তার জীবনে ক্রমোন্নতি করতে পারবেন। এমনকী শাস্ত্রে এমন কিছু বস্তুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি বসন্ত পঞ্চমীর দিন বাড়িতে আনলে আগামী সমস্ত কিছু শুভ হবে।
চলুন তবে দেবী সরস্বতীর প্রিয় ভোগ (Saraswati Puja) এবং এই বিশেষ বস্তুগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক সম্পর্কে:-
দেবী সরস্বতীর ভোগের কথা উঠলে যে বস্তুটির কথা সর্বপ্রথম আসে তা হলো বেসনের লাড্ডু। বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতীকে বেসনের লাড্ডু অর্পণ করতে পারলে দেবী সরস্বতী এবং দেবগুরু বৃহস্পতি তুষ্ট হন। ফলত বিয়ে সংক্রান্ত সমস্ত বাধা দূর হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শাস্ত্রে দেবীর প্রিয় ভোগগুলির মধ্যে হলুদ রঙের মিষ্টি ভাত অর্থাৎ জাফরান ভাতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিন দেবীকে যা জাফরান ভাত নৈবদ্য রূপে অর্পণ করলে পরিবারে ইতিবাচক শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
আবাস যোজনায় কারা ঘর পাবে আর কারা ঘর পাবে না। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিল সরকার
বিভিন্ন স্বার্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বসন্ত পঞ্চমীর দিন মা সরস্বতীকে জাফরানের হালুয়া ভোগ হিসেবে প্রদান করলে উক্ত ব্যক্তির সমস্ত কষ্ট দূর হয় এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা যায়। এছাড়াও শাস্ত্রে দেবী সরস্বতীকে ভোগ হিসেবে বোঁদে অর্পণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এতে ভোগ অর্পণকারীর বুদ্ধি বিকশিত হয়। এর পাশাপাশি, সরস্বতী পূজার দিন দেবীকে হলুদ রঙের মিষ্টি নিবেদন করলে তিনি সন্তুষ্ট হন। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, বসন্ত পঞ্চমীর দিন মা সরস্বতীকে রাজভোগ নিবেদন করলে উক্ত ব্যক্তির সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সন্তানের সাফল্য লাভের পথে সমস্ত বাধা দূর করতে বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবীকে মালপোয়ার ভোগ নিবেদন করুন। ভোগ হিসেবে মালপোয়া নিবেদন করলে জাতকের মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।
বসন্ত পঞ্চমীর দিন উপরোক্ত দ্রব্যগুলি দেবীকে নিবেদন করার পাশাপাশি আপনার বাড়িতে বিয়ের পোশাক কিংবা শৃঙ্গারের পোশাক আনতে পারেন, এর ফলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়। দেবীর হলুদ রং বিশেষ পছন্দ আর তাই বসন্ত পঞ্চমীর তিথিতে আপনার বাড়ির প্রবেশদ্বারে হলুদ রঙের ক্রিস্টাল ঝুলিয়ে রাখলে আপনার সন্তানের পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধা আসবে না। সৌভাগ্য ফেরানোর জন্য সরস্বতী পূজার দিন আপনার বাড়িতে একজোড়া ময়ূরপঙ্খী গাছ আনতেই পারেন। এই গাছটিকে বিদ্যার গাছও বলা হয়ে থাকে। বসন্ত পঞ্চমীর মহালগ্নে আপনার বাড়ির পূর্বদিকে একজোড়া ময়ূরপঙ্খী কাজ লাগালে বাড়িতে লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর কৃপা বর্ষণ হবে।
যারা সংগীতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তারা সরস্বতী পূজার দিন যেকোনো বাদ্যযন্ত্র কিনে তা দেবীর পায়ে অর্পণ করতে পারেন। এমনকী যারা আগামী দিনের সঙ্গীত শিখতে আগ্রহী তারা এই দিন নিজেদের সংগীত শিক্ষার সূচনা করতে পারেন, এতে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পাবেন। বসন্ত পঞ্চমীতে দেবী সরস্বতী নতুন ছবি কিনে বাড়িতে এনে বাড়ির ঈশান কোণে লাগালে বাড়িতে ইতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং বাচ্চাদের মানসিক বিকাশও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, বসন্ত পঞ্চমী দিন বাড়ি এবং গাড়ি কেনা অত্যন্ত শুভ। সুতরাং, আপনিও যদি গাড়ি কিংবা বাড়ির মধ্যে যেকোনো একটি কিনতে চান তবে আগামীকালের থেকে ভালো দিন আর একটিও পাবেন না। বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে বাড়ি কিংবা গাড়ির মধ্যে যেকোনো একটি কিনলে উক্ত ব্যক্তি সারাজীবন সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নতি করবেন।