mysterious-railway-station-of-india-everyone-buys-tickets-but-no-one-gets-on-the-train

আমাদের ছোটোবেলায় কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ বলতে প্রথমেই মাথায় আসতো ট্রেনের কু ঝিঁক ঝিঁক শুনতে শুনতে হাল্কা দোলুনি খেতে খেতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া। এমনকী বাড়ির আশেপাশে রেলওয়ে ট্র্যাক থাকলে ট্রেনের শব্দ শুনলেই এক দৌড়ে ট্রেন দেখতে যাওয়ার একটা আলাদাই মজা ছিলো। আমাদের দেশে ভারতে রেল ব্যবস্থা চালু হয় ১৮৫৩ সালে। বর্তমানে ভারতীয় রেলওয়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সারা পৃথিবীর মধ্যে চতুর্থ বৃহৎ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। প্রতিদিন ১কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী এবং ২০লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেল পথে যাতায়াত করে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ভারতীয়দের কাছে রেলওয়ে ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা কতোটা।

কিন্তু আজ আপনাদের এমন এক রেলওয়ে স্টেশনের কথা জানাবো, যেখানে রোজ রোজ টিকিট তো কাটা হয় কিন্তু ট্রেনে যাতায়াত করেন না কেউই। কি অদ্ভুত লাগছে তো শুনতে? অদ্ভুত লাগলেও ভারতের এক প্রত্যন্ত গ্রামে প্রতিদিন ঘটে চলেছে এই অবাক করা ঘটনা।

ভারতের কোন রেল স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে?

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের পাশে অবস্থিত দয়ালপুর স্টেশন। যেখানে নিয়ম করে গ্রামের লোকজন টিকিট বুক করেন কিন্তু ট্রেনে কেউ চড়েন না। বছরের ৩৬৫ দিনই এই নিয়মের কোনো নড়চড় হয় না।

আরও পড়ুন:- শুরু হয়ে গেল কৃষক বন্ধুর টাকা দেওয়া। আপনি কবে টাকা পাবেন জেনে নিন।

আসল রহস্য কি?

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর সুপারিশে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ১৯৫৪ সালে দয়ালপুরে রেলওয়ে স্টেশনটি চালু করেন। স্টেশনটি প্রায় ৫০ বছর ধরে খুব ভালো ভাবে চললেও ২০০৬ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্টেশন টিকে বন্ধ করে দেয়। কারণ ভারতীয় রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী মেইন লাইনের স্টেশনগুলিতে রোজ ৫০টি করে এবং ব্রাঞ্চ লাইনের যে সমস্ত স্টেশন রয়েছে সেগুলিতে রোজ ২৫ টি করে টিকিট বুকিং হওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যথায়, স্টেশনগুলিকে চালু রাখা হয়না, বন্ধ করে দেওয়া হয়। দয়ালপুরের বাসিন্দারা হঠাৎই ট্রেনে যাতায়াত করা বন্ধ করে দেন, যার ফলে টিকিট বুকের পরিমাণও কমতে থাকে এবং একসময়ে রেলের নিয়ম অনুযায়ী দয়ালপুর স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

mysterious-railway-station-of-india

এইবার স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে স্থানীয় লোকেরা নানানরকম অসুবিধার সম্মুখীন হন। লোকাল বাসিন্দারা যারা স্টেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের চাকরি চলে যায়, স্টেশন এর মধ্যে এবং বাইরে যে দোকানদার ও হকারেরা ব্যবসা করে নিজেদের রুজিরুটি চালাতেন তারা বেরোজগার হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশন থাকাতে যেসব সুযোগ-সুবিধা স্থানীয়রা লাভ করতেন তা থেকে বঞ্চিত হোন।

আরও পড়ুন:- নবান্ন স্কলারশিপে আবেদন করলেই প্রত্যেক বছরে পেয়ে যাবেন ১০,০০০ টাকার অনুদান।

সমাধান

এরপর গ্রামবাসীরা স্টেশন থাকবার গুরুত্বটি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারেন এবং স্টেশন পুনরায় চালুর লাগাতার দাবি জানাতে থাকেন। অবশেষে ২০২২ সালে স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ, গ্রাম বাসীদের আর্জি শুনে ভারতীয় রেল মন্ত্রক দয়ালপুর রেলওয়ে স্টেশনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। আর তারপর থেকেই রোজ গ্রামবাসীরা দলে বিভক্ত হয়ে পালা করে ৫০ টি করে টিকিট কাটেন, যাতে তাদের গ্রামের স্টেশনটিকে ফের বন্ধের মুখে না পড়তে হয়। এখন দয়ালপুর গ্রাম বাসিন্দাদের কাছে রোজ রেল টিকিট কাটাই যেনো এক অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপসংহার

ভারতবর্ষ এমনি একটি দেশ যা সমগ্র বিশ্বের কাছে বৈচিত্র্যতার মাঝে ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তারই এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো দয়ালপুর স্টেশন এর ঘটনা। যখন স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই সেখানকার বাসিন্দারা একে অপরের জন্য রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবিতে একজোট হয়ে নিজেদের দাবি আদায় করেন। শুধু তাই নয়, স্টেশনটি যাতে পুনরায় ক্ষতির মুখে পড়ে বন্ধ না হয়ে যায় তার জন্য প্রতিদিন লাগাতার টিকিট কেটে নিজেদের ঐক্যতার ও একে অন্যের জন্য সদভাবের উদাহরণ স্থাপন করে চলেছেন।