একবিংশ শতকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েও আমাদের সমাজের একটা বড় অংশের কাছে কন্যা সন্তান অভিশাপের মতন। কারণ কন্যাসন্তানকে যতোই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা যাক না কেনো, বিয়ে করে সে অন্য পরিবারে চলে যাবে। এটাই সমাজের প্রচলিত ধারণা। আর এই বিয়ের জন্যই আর্থিক খরচ কুলিয়ে ওঠাই হচ্ছে বেশিরভাগ মা-বাবার কাছে বিশেষত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই চিন্তার থেকেই অল্প বয়সে ভালো পাত্র পাওয়ার অজুহাতে শত শত নাবালিকা মেয়ের জীবন বিপন্ন হয় বিয়ের পরে।
সমস্ত খবর সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন – Link
এই কঠিন বাস্তব সামাজিক সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মহাশয়া ২০১৮ সালের ১লা এপ্রিল থেকে রূপশ্রী প্রকল্পের (Rupashree Prakalpa Apply) সূচনা করেন। এই প্রকল্প টিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মেয়েরা তাদের বিয়ের আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করে ২৫ হাজার টাকার অনুদান পেতে পারেন।
রূপশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য :-
১. আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা পরিবারের কন্যার বিয়ে যাতে অর্থের অভাবের জন্য ভেঙে না যায় অথবা মেয়ের বিয়ের জন্য পরিবারকে ঋণের বোঝা বহন করতে না হয় তার জন্যই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ নেওয়া রূপশ্রী প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে।
২. কন্যাশ্রী প্রকল্পের অভাবনীয় সাফল্যের পর ও গ্রাম বাংলায় নাবালিকা মেয়েদের বলপূর্বক বিয়ের প্রবণতা আটকানো যায়নি। সেক্ষেত্রে রূপশ্রী প্রকল্পে ১৮+ বয়সী মেয়েদের বিবাহে আর্থিক অনুদানের প্রকল্প এনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার প্রয়াস চালানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়মে আনা হলো বিরাট পরিবর্তন। এবার টাকা তুলতে গেলেই কাটবে অতিরিক্ত চার্জ।
রূপশ্রী প্রকল্প পাওয়ার শর্তাবলী :-
১. আবেদনকারীকে অবশ্যই পচিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে অথবা গত ৫ বছর ধরে স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গে বাস করতে হবে অথবা আবেদনকারীর মা-বাবাকে স্থায়ীভাবে পচিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে।
২. আবেদনকারীর বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতেই হবে।
৩. যেপ্রার্থী নিজের বিয়ের খরচের জন্য রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদন করছে তার যেনো এটি প্রথম বিবাহ হয় অর্থাৎ একই মেয়ের একাধিক বিয়ের জন্য এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে না।
৪. মেয়েটির পারিবারিক বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বা তার কম হতে হবে।
৫. যে পাত্রের সঙ্গে আবেদনকারী মেয়ের বিয়ে হচ্ছে তার বয়স নূন্যতম ২১ বছর হতে হবে।
৬. আবেদনকারীর একটি সক্রিয় নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজন। যেটি এককভাবে সে পরিচালনা করে এবং এমন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে যে ব্যাঙ্কের আই এফ এস সি কোড, এম আই সি আর কোড থাকবে।আর এনইএফটি এর মধ্য দিয়েই পেমেন্টের সুবিধা থাকবে।
রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদনের প্রক্রিয়া (Rupashree Prakalpa Apply):-
১. রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদনপত্রটি প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbrupashree.gov.in/admin/Login/ থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
২. এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই প্রথমে আসবে হোম পেজ।
৩. ওপরে মেনু বারে আছে অনেক অপশন।
৪. মেনু বারের Form নামক অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
৫. Form এ ক্লিক করলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আবেদনপত্র দেখা যায়।
৬. সেখানে থেকে সিলেক্ট করে নিতে হবে Application Form of Rupashree Prakalpo অপশন টিকে।
৭. এবার ক্লিক করতে হবে Open Now অপশনে।
৮. তাহলেই চলে আসবে রূপশ্রীর মূল ফর্ম। এই ফর্মটিই PDF ফরম্যাটে আবেদন করার জন্য প্রিন্ট নিতে হবে।
৯. এরপর ফর্মটিতে আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্য পূরণ করতে হবে।
১০. ফর্মের প্রথম পাতায় প্রার্থী একটি ফটো লাগবে।
১১. আবেদনকারীকে স্বাক্ষরের নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাক্ষর করতে হবে।
১২. এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি নির্দিষ্ট রূপশ্রী কেন্দ্রে জমা করতে হবে।
১৩. ফর্মটি জমার পর একটি স্লিপ দেওয়া হবে, যেখানে Application ID থাকবে। সেই ID দিয়ে প্রার্থী নিজের অ্যাপ্লিকেশন এর স্টেটাস চেক করতে পারবেন।
২ টাকার এই বিশেষ নোট বিক্রি করে রাতারাতি হন লাখপতি। রইলো বিস্তারিত
রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :-
১. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
২. ভোটার কার্ড।
৩. বার্থ সার্টিফিকেট।
৪. আবেদনকারী মেয়েটির একক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এর বিবরণী (ব্যাঙ্কের পাসবুক)।
৫. মেয়েটির সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা।
৬. পাত্র এবং পাত্রীর পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ফটো কপি।
৭. আবেদনকারী মেয়ে যে অবিবাহিত তার জন্য একটি স্ব-ঘোষিত পত্র দিতে হবে।
৮. পাত্রের বয়সের প্রমানের জন্য ভোটার আই কার্ড, আধার কার্ড, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড এর মধ্যে যেকোনো একটি প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবারের কন্যা সন্তানদের পর্যাপ্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ প্রাপ্তি এবং নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে নানান প্রতিকূলতার শিকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এরকম অভিনব পদক্ষেপকে সমগ্র দেশবাসী কুর্নিশ জানিয়েছেন।